বড় কিছুর আশায় পবিত্র নগরীতে মিরাজরা
সমুদ্রতীরের কলম্বো থেকে বাংলাদেশ দল এখন পাহাড়ঘেরা ক্যান্ডিতে। শ্রীলঙ্কার এ শহর বৌদ্ধধর্মালম্বীদের পবিত্র নগরী হিসেবে পরিচিত। শহরের নয়নাভিরাম ক্যান্ডি লেকের ঠিক পাড়েই ‘টেম্পল অব টুথ’, যেখানে গৌতম বুদ্ধের একটি দাঁতের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত আছে বলে বিশ্বাস বৌদ্ধধর্মালম্বীদের।
মানসিক শান্তি লাভের উদ্দেশ্যে সারা বছরই বৌদ্ধ পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এ শহরে। তবে সেটি কয়েক গুণ বেড়ে যায় জুলাই-আগস্টের এসালা পেরাহেরা উৎসবের সময়। ১০ দিনব্যাপী চলা উৎসবে সারা বিশ্ব থেকেই বৌদ্ধরা আসেন ক্যান্ডিতে। এবারের পেরাহেরার তারিখ পড়েছে ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত।
ক্যান্ডি বাংলাদেশ দলের জন্য স্বস্তির অন্য কারণে। এ মাঠের ওয়ানডে পরিসংখ্যানে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের সাফল্য ফিফটি-ফিফটি। অর্থাৎ ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে দুই দলের মধ্যে হওয়া ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা জিতেছে সমান সংখ্যক ম্যাচ। সেই ম্যাচের সংখ্যা অবশ্য খুবই কম, মাত্র দুটি। যার একটি জিতেছে বাংলাদেশ, অন্যটি শ্রীলঙ্কা।
২০১৩ সালের মার্চে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার ৩০২ রান তাড়া করে ডি/এল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩ উইকেটে। তার ১০ বছর পর ২০২৩ সালের আগস্টে এশিয়া কাপের ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৬৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জেতে ৫ উইকেটে। তার মানে আগামী ৮ জুলাইয়ের সিরিজ নির্ধারর্ণী ম্যাচে যারা জিতবে, সিরিজ জয়ের সঙ্গে পাল্লেকেলেতে নিজেদের ইতিহাসেও এগিয়ে যাবে। এ মাঠে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি আছে টেস্ট ড্রয়েরও।
এশিয়া কাপের দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার আছেন এবারের সফরের ওয়ানডে দলেও। তার মধ্যে আলাদা করে বলতে হয় নাজমুল হোসেনের কথা। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৯ রান করেছিলেন নাজমুল। সেই তিনিই এবারের ওয়ানডেটি খেলতে পারেন কি না, তা নিয়ে মৃদু সংশয় তৈরি হয়েছিলে কলম্বোর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঊরুর মাংসপেশিতে চোট পাওয়ায়।
তবে এখন আর তাঁকে নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছে আজ সন্ধ্যায় ক্যান্ডিতে পৌঁছানো বাংলাদেশ দলের একটি সূত্র। যেহেতু নাজমুল নিজেও আর সমস্যার কথা বলছেন না এবং টি-টোয়েন্টি দলে নেই বলে ক্যান্ডিতে খেলার পর তিনি মোটামুটি লম্বা বিরতিতে যাবেন; শেষ ওয়ানডেতে তাঁকে খেলাতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। ব্যাট হাতে নাজমুল ছন্দে আছেন, সিরিজ জয়ের ম্যাচে তাঁর না খেলাটা দলের শক্তিও কমিয়ে দিতে পারে খানিকটা।
মেহেদী হাসান মিরাজের অধীন কলম্বোতে প্রথম জয় পাওয়ার পর এখন সিরিজ জয়েই চোখ বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মিরাজের দল বুঝিয়ে দিয়েছে, জয়ের ক্ষুধাটা তাদের আছে। নইলে জানিত লিয়ানাগের ওরকম ব্যাটিংয়ের মধ্যেও কীভাবে আশা ধরে রাখেন ক্রিকেটাররা!
তানভীর ইসলামের পিঠ চাপড়ে অধিনায়ক মিরাজ তো এমনি এমনি সাহস দিয়ে বলেননি, ‘বোলাররাই মার খায়। নেগেটিভ বোলিং করিস না। উইকেট নেওয়ার বোলিং কর।’ অধিনায়কের মন্ত্রে উজ্জীবিত তানভীর সেটাই করেছেন। প্রথম ২ ওভারে ২২ রান দিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩৯ রানে ৫ উইকেট।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়াডেতেই ‘ফাইফার!’
শামীম হোসেনের বোলিংও ছিল চোখে আটকে থাকার মতো। দর্শকদের চোখে এবং শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের চোখেও। টানা ভালো জায়গায় বল করে যাওয়ার পুরস্কার তাঁর চারিত আসালাঙ্কার উইকেটটি। প্রেমাদাসায় লংকান অধিনায়কের ধারাবাহিক সাফল্যে ছেদ পড়ল তাতে। ব্যাটিংয়ে ২২ রান করেছেন, বোলিংয়েও ৯ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২২ রানই।
মোস্তাফিজুর রহমানও আরেকবার দেখিয়েছেন অভিজ্ঞতার কী দাম! প্রথম ওভারেই দিয়েছেন ১৭ রান, যার ১৬-ই প্রথম চার বলে কুশল মেন্ডিসের টানা চার বাউন্ডারিতে। এরপরও নিজের নামের প্রতি কমই সুবিচার করতে পারছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। ফিল্ডিংয়েও মাঝেমধ্যেই মনে হয়েছে, নিজের মধ্যে নেই।
কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করাই বড় ক্রিকেটারদের দায়িত্ব, যেটা তিনি করেছেন শ্রীলঙ্কাকে জয়েরদিকে নিতে থাকা লিয়ানাগেকে ফিরিয়ে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শ্রীলঙ্কার সিরিজ জয়ের স্বপ্নের সমাধি আসলে সেখানেই। সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কার সিরিজ জয় দেখতে আসা দর্শকেরা দেখে গেলেন বাংলাদেশের সিরিজে ফেরার উৎসব।
তামিম, সাকিব আগে থেকেই নেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ওয়ানডে দলটা এখন একটু অনভিজ্ঞই। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল লড়াইয়ের যে মানসিকতা দেখিয়েছে, ওয়ানডেতে টানা পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের করে আনার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া লাগিয়েছে দলের আত্মবিশ্বাসের পালেও। পাল্লেকেলেতে এখন সেটা ধরে রাখতে পারাটাই লক্ষ্য মিরাজের দলের।
তা ধরে রাখতে পারলে বড় একটা পুরস্কারও আছে—শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়।