গাজাবাসীকে রাফাহ ক্যাম্পে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

 

গাজাবাসীকে রাফাহ ক্যাম্পে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

গাজায় শিশু
গত ২০ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বেশিরভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে
    • Author,আয়নি ওয়েলস এবং ডেভিড গ্রিটেন
    • Role, জেরুজালেম থেকে

গাজায় অবস্থিত সব ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণাঞ্চলের একটি ক্যাম্পে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলোতে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি রাফাহ শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর একটি 'মানবিক শহর' প্রতিষ্ঠা করতে চান। শহরটি পুরো ২১ লাখ জনসংখ্যার জন্য হলেও সেখানে প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করতে পারবেন।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা তল্লাশির পর মানুষজনকে এই শহরের ভেতরে আনার লক্ষ্য ছিল যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় তারা হামাসের কর্মী নয় এবং তাদের আর সেখান থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।

যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে তাহলে ইসরায়েল ও হামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সমঝোতা চেষ্টার সময় নির্মাণকাজ শুরু হবে।

ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল স্ফার্ড এটিকে "মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য পরিকল্পিত অভিযান" ছাড়া আর কিছুই নয় বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

গার্ডিয়ান নিউজপেপারকে তিনি বলেছেন, "জনগণকে যাতে এই উপত্যকার বাইরে নির্বাসনে পাঠানো যায় তারই প্রস্তুতির অংশ গাজার দক্ষিণ প্রান্তে জনগণকে স্থানান্তর।"

এর আগে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, অধিকৃত ভূখণ্ডের বেসামরিক জনগোষ্ঠীর নির্বাসন বা জোরপূর্বক স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং "জাতিগত নির্মূলের সমতুল্য"।

তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অথবা হামাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজায় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে চলছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

ছবির উৎস,AFP via Getty Images

ছবির ক্যাপশান,গাজায় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে চলছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

সোমবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী গাজা আমেরিকার দখলে নেওয়া উচিত এবং এর জনসংখ্যা স্থায়ীভাবে অন্যত্র পুনর্বাসিত করা উচিত।

নেতানিয়াহু বলেন, "আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এটাকেবলা হয় স্বাধীন পছন্দ। যদি মানুষ থাকতে চায়, তারা থাকতে পারে। কিন্তু যদি তারা চলে যেতে চায় তবে তাদের চলে যেতে পারা উচিত।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খুব নিবিড়ভাবে কাজ করছি এমন দেশগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য যারা সবসময় যা বলে তা উপলব্ধি করতে চাইবে যে তারা ফিলিস্তিনিদের একটি উন্নত ভবিষ্যত দিতে চেয়েছিল।"

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "আশেপাশের দেশগুলো থেকে আমরা দারুণ সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই দারুণ সহযোগিতা। তাই ভালো কিছু ঘটবে।"

মার্চ মাসে আরব রাষ্ট্রগুলো গাজার পুনর্গঠনের জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গিয়ে মিশরের ৫৩ বিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছিল।

যেটি গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের তাদের জায়গায় থাকার সুযোগ করে দেবে।

"ফিলিস্তিনি জনগণের যে কোনো ধরনের বাস্তুচ্যুতির স্পষ্ট প্রত্যাখ্যানের" ওপর জোর দিয়ে তারা এই ধারণাকে "আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নির্মূল" বলে ব্যাখ্যা করেছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং হামাসও মিশরের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল বলেছে তারা গাজার বাস্তবতা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান

ছবির উৎস,Reuters

ছবির ক্যাপশান,২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর হামাসের সীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গাজায় অভিযান শুরু করে

ফিলিস্তিনিরা নাকবার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা করছে, যেটির আরবি শব্দ 'বিপর্যয়', যা ঘটেছিল ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরে এবং যুদ্ধের সময় যখন লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল অথবা বিতাড়িত হয়েছিল।

এই শরণার্থীদের অনেকেই গাজায় আশ্রয় নিয়েছেন। যেখানে তারা এবং তাদের বংশধররাই ওই জনসংখ্যার তিন – চতুর্থাংশ।

জাতিসংঘ বলছে, আরও নয় লাখ নিবন্ধিত শরণার্থী অধিকৃত পশ্চিম তীরে বাস করে। আরও ৩৪ লাখ জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননে বাস করে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর হামাসের সীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গাজায় অভিযান শুরু করে।

হামাসের হামলায় প্রায় বারশো জন নিহত হয় এবং জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় ৫৭ হাজার পাঁচশো জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

গাজার বেশিরভাগ জনগণ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নব্বই শতাংশের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ঘাটতি রয়েছে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের।

জানুয়ারিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এক লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন ফিলিস্তিনি এই হামলায় আহত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত তেসরা জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে জানায়, এই আহতদের মধ্যে ২৫ শতাংশের আঘাত এতটাই গুরুতর যে তাদের জীবন আর আগের অবস্থায় ফিরবে না।

মেডিসান সান ফন্তিয়েখ (এমএসএফ)-এর সমন্বয়ক কারিন হাস্টার বিবিসি ভেরিফাইকে বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে আহত রোগীদের ঠিকমতো দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা 'ভয়াবহ' চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চাইতেও উল্লেখযোগ্য হারে বেশি হতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post